ইন্টারনেট ভিত্তিক বাংলা ভাষায় শিল্প ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যম।
নবীন ও শখের লেখক ও শিল্পীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত
সাহিত্য ও চিত্রশিল্প
সৃষ্টিকর্মের স্বত্ব স্রষ্টার নিজের
ব্যবহার ও প্রকাশনা একদম ফ্রী
প্রথম কথা
সৃষ্টিশীলতা ও সৃষ্টি করার ইচ্ছা থেকে একজন লেখক বা শিল্পীর জন্ম। দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রপত্রিকায় নিজের লেখা বা অঙ্কন ছাপানোর ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। তারা পাঠায় কিন্তু শেষে হয়তো তা ছাপা হয় না। শ্রাবণতিথি সেইসব নবীন ও শখের লেখক ও শিল্পীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাহিত্যকর্ম বা চিত্রকর্ম প্রকাশ করা যাবে এবং প্রকাশের জন্য কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না। শ্রাবণতিথির কোন সম্পাদক নেই। কোন সম্পাদক ঠিক করে দেবে না কোনটা ছাপানো হবে আর কোনটা আবর্জনায় ফেলে দেয়া হবে। লেখার ভুলত্রুটি, বাক্য গঠন, বানান, ব্যাকরণ, সম্পাদনার জন্য কেউ নেই। এখানে শিল্পী বা লেখকের একমাত্র সমালোচক হচ্ছে পাঠক নিজেরা। পাঠকের প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য একজন শিল্পী বা লেখককে তার সৃষ্টির মাণ সম্পর্কে ধারনা দেবে। সেটা ব্যবহার করে শিল্পী বা লেখক তার সৃষ্টি ও নিজেকে উন্নত করবে। আমরা আশাবাদী যে কালক্রমে এখান থেকে হয়তো আরেকজন হুমায়ূন আহমেদ বা জয়নুল আবেদিনের পথচলা শুরু হবে
শ্রাবণতিথি প্রতিষ্ঠা ইতিহাস
শ্রাবণতিথির প্রতিষ্ঠার অন্যতম বড় কারন আমার বই পড়ার নেশা ও বইয়ের প্রতি ভালবাসা। মাত্র চার বছর বয়সে জন্মদিনে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একটা বই উপহার পেয়েছিলাম। আমার খালার এক বান্ধবী সেটি উপহার দিয়েছিল। বইটির নাম ছিল ” মে ফ্লাওয়ার “। সেটা কয়েক পাতা পরে ঘোড়ার মাথাও বুঝি নাই। পড়ার টেবিলে বইটা রেখে আমি সেটার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। সাত বছর বয়সে জন্মদিনে আমার মামার এক বন্ধু বইমেলা থেকে মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল স্যারের একটা বই উপহার দিয়েছিল। বইয়ের নাম ” টুকি এবং ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান “। এবারো বই পরে কিছুই বুঝলাম না কিন্তু । তখন ভারতের কার্টুনিস্ট প্রাণের ডায়মন্ড কমিকসের আমি অনেক ভক্ত ছিলাম। আমার মা প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সেই কমিক বাসার কাছের লাইব্রেরি থেকে কিনে দিত। ” চাচা চৌধুরি, বিল্লু, পিঙ্কি, রমন, সাবু আর ডাইনামাইটদের সাথে আমার বই পড়ার অভ্যাস শুরু। একটু বড় হলে ইশপ, হান্স অ্যান্ডারসন, আমার বইয়ের জগত দখল করে নেয়। এরপর একদিন আমার ও’ লেভেল পরীক্ষা শেষ হবার পরে ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে একুশে বইমেলায় ঘুরতে যাই। সেটা ছিল আমার জীবনের প্রথমবার বইমেলায় যাওয়া (না যাবার কারন ছিল)। সেইদিন বইমেলা থেকে মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল স্যারের পুরো সায়েন্স ফিকশান সমগ্র কিনে ছিলাম। তাতে মোট ৪টি সমগ্র বই ছিল। আমি ও’ লেভেলে সম্পূর্ণভাবে সায়েন্স নিয়েছিলাম যা ছিল সায়েন্স ফিকশান গল্পের বই কেনার বড় কারন। প্রথমবার সেই বই পড়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম তা কোন ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ফেব্রুয়ারী মাস শেষ হওয়ার আগে পুরো সমগ্র পড়া শেষ। বিশাল সমস্যা। এর কিছুদিন বাসায় আমার আম্মুর পড়া কিছু গল্পের বই খুজে পাই। নীল মলাটের একটা বই নাম বা লেখক না দেখেই পড়া শুরু করি। কয়েক লাইন পড়েই বুঝলাম এরকম বই জীবনে কখনো পড়ি নাই। এক টানে বই শেষ। বইয়ের নাম ছিল ” এবং হিমু “, লেখক হুমায়ূন আহমেদ। ওখানে আরও বেশ কয়েকটা হিমুর বই ছিল যা দিন শেষ হওয়ার আগে পড়া শেষ। কয়েক মাস পড়ে নীলক্ষেতের সামনে একটা পত্রিকা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পুরো হিমু সমগ্র কিনি। টাকা জমানোর জন্য ও আম্মুর কানের কাছে প্যানপ্যান করার জন্য কয়েক মাস সময় লেগেছে। হিমু সমগ্রের সাথে আরও কিনি মিসির আলি সমগ্র। পরিবর্তী মাস জুড়ে এরপর একে একে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র, শঙ্কু সমগ্র, সুনীল গঙ্গোপদ্ধায় কাকাবাবু সমগ্র আইসাক এসিমভ, ড্যান ব্রাউন, জে কে রাউলিং ছাড়াও বিভিন্ন দেশী বিদেশী লেখকের বই আমার বুকশেলফ ভরতি করে ফেলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় গল্পের বই পড়াতে ভাটা পড়ে। মূল কারন, সময়ের সংকট। আমার আগে থেকেই বিজ্ঞানপ্রীতি ছিল আর জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ে সেটি হয়ে যায় লাগামছাড়া। উধাহরণ, ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় না জেনে বুঝে ফিজিক্স বই থেকে ইনডাকসন কয়েল বানিয়ে সেই কয়েলের শক খেয়ে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। হাত পা কাটা বা পোড়ার কথা বাদ রাখলাম। ” বড় হয়ে কি হবে ” কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতাম ” সায়েন্টিস্ট ” । সেই ধারাবাহিকতায় ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার সময় পছন্দ করেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং। রোবটিক্স বা মেকাট্রনিক্স পড়ার তুমুল আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে সুযোগ না থাকায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম (যদিও তাতে আমার আক্ষেপ নেই)। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোজখে গল্প পড়ার সুযোগ অতি সীমিত। আর সুযোগ থাকলেও ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু। শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বই পড়ে, চোখের পানির বন্যা বইয়ে, মাথার চুল ছিঁড়ে, ঘুমের মধ্যে পরীক্ষা আর প্রোজেক্টের দুঃস্বপ্ন দেখে ইউনিভার্সিটি জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটেছে। আর ইউনিভার্সিটি পরবর্তী জীবনও প্রায় একই রকম ব্যস্ততার। তাই ইচ্ছা থাকলেও খেয়ালখুশি মত বই কেনা বা পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি নিজে কোন লেখক না। আমার লেখার দৌড় থিসিস, টেকনিক্যাল পেপার, জার্নাল ও রিসার্চ পেপার পর্যন্ত সীমিত। তবে যারা সত্যিকার অর্থেই লেখালেখিতে আগ্রহী, যারা টাকা পয়সার চিন্তা না করে শুধু নিজের লেখা ছাপিয়ে গর্বের সাথে বলতে আগ্রহী, তাদের জন্য আমার এই ওয়েবসাইট। তবে শ্রাবণতিথির বিশেষ দুইটি কারনে প্রতিষ্ঠা করা।
প্রথম কারন
প্রযুক্তির উন্নতি ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কারনে এখন স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সবার হাতে নাগালে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের। তবে দুর্ভাগ্যবশত এই একই স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন মানুষ বই পরতে ভুলে গিয়েছে। আগে বইয়ের পাতা উল্টানো আঙুল এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও আর পোস্ট পরিবর্তন করার কাজে ব্যবহার হয়। নতুন প্রজন্ম এখন শৈশব থেকেই স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে বেড়ে উঠছে। নতুন বইয়ের পাতার গন্ধ বা নতুন একটা গল্প পড়ার আনন্দ হতে তারা অনেক অংশেই বঞ্চিত। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা শিল্পসাহিত্যচর্চাকেও ইন্টারনেট ভিত্তিক করার চেষ্টা করছি। যদিও অনেকে ইন্টারনেটে শিল্পসাহিত্য চর্চার চেষ্টা করছেন। এখন অনেকেই ফেসবুককে শিল্প ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যম হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত ফেসবুক একটি পুঁজিবাদী বিদেশী প্রতিষ্ঠান যারা অর্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক অনেক যত্ন করে লেখা কোন শিল্পকর্ম কোন যুক্তিগত কারন ছাড়াই মুছে ফেলে বা সম্পূর্ণ গ্রুপ অথবা অ্যাকাউন্ট অতি ঠুনকো ছুতো দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়। বিদেশে ইংরেজি ভাষার ওয়েবসাইট থাকলেও বাংলায় কিছু নেই। তাই শুধুমাত্র বাংলা ভাষার শিল্পসাহিত্যর জন্য শ্রাবণতিথির জন্ম।
দ্বিতীয় কারন
আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে নবীন লেখকরা প্রকাশকের পেছনে ছুটছে ও ঘুরছে। জুতার সুকতলা ক্ষয়ে যায় কিন্তু প্রকাশকের মন গলে না আর নবীনদের লেখাও ছাপা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে নবীনদের লেখা ভাল হলেও ছাপা হয় না কারন প্রকাশক নবীনদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। একুশে বইমেলায় বই প্রকাশকের জন্য ডলার ইউরোর বান্ডিল নিয়ে আসা বিদেশী বাঙ্গালী লেখকদের কাছে গুণী নবীনরা ধরাশই। এক্ষেত্রে প্রকাশকদের দোষারোপ করা অন্যায় হবে কারন বই প্রকাশ করা প্রকাশকদের ব্যবসা, তাদের জীবিকা, আর ব্যবসায় ও জীবিকার ঝুঁকি জেনেবুঝে কে নিবে। ডলার ইউরোর বান্ডিল সমেত আসা একজন অপরিচিত লেখক অবশ্যই একজন অপরিচিত কপর্দকহীন নবীনের থেকে লাভজনক। এক্ষেত্রে গুণ ও মাণের চাইতে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অসাধু প্রকাশক বা প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা নবীনদের অপরিণামদর্শীতার সুযোগ নিয়ে থাকে। মোটা অংকের অর্থ নিয়েও বই না ছাপানো বা সাহিত্যকর্ম নবীন লেখকের কোন অনুমতি ছাড়াই নিজের নামে ছাপানোর ঘটনা অহরহ ঘটছে। আমরা নবীনদের অন্ততপক্ষে একটি সুযোগ দিতে চাই। একজন শিল্পী বা লেখকের জনপ্রিয়তার শতভাগই আসে তার পাঠক ও অনুরাগীদের কাছ থেকে। আমরা এই নবীনদেরকে পাঠকের কাছে যাবার একটি সুযোগ করে দিতে চাই।